Saturday, November 5, 2016

বিএনপির উচ্চমার্গের পররাষ্ট্রনীতি

পিএইচডি করার ইচ্ছে ছিল না। ইদানিং হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মী বলেই কিনা ! টপিকও ঠিক করে ফেলেছি। এখন আপনারা সায় দিলেই একশ্যান শুরু করবো। আপনাদের 'সায়' নেয়ার প্রাসঙ্গিকতা আছে। কারণ- পিএইচডি কালীন সময়ে আপনাদের সাহায্য ব্যতিত আমি কোনভাবেই সফল হতে পারবো না। ওকে, ভূমিকা বাদ। আগে বলে নিই- আমার পিএইচডি গবেষনার টপিক কি?

''বিএনপির রাজনৈতিক কূটনীতি ও দুর্বোধ্য পররাষ্ট্রনীতি''। ইতোমধ্যে যারা পিএইচডি করেছেন অথবা করছেন- তারা এই টাইটেল দেখে নাখোশ হলেও আমার কিচ্ছু করার নাই। আমি এইটা নিয়েই কাজ করবো। একাডেমিক সংজ্ঞায় এটি কতটা জ্ঞাণগর্ভ রিসার্চ হবে জানি না। কিন্তু বর্তমানের বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে এ ধরনের একটি রিসার্চের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি, বেশ কিছুদিন ধরে। কেউ এগিয়ে আসছে না, বিধায় কি আর করার?

থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকী শুনি প্রায়শই। বাস্তবেও তা ঘটে। এই যেমন শরীয়তপুরে ছাত্রলীগ নেতার থাপ্পড়ে থানার এসআই এর দাঁত পড়ে গেল। তাই বলে থাপ্পড় মারলে যে পররাষ্ট্রনীতিও চীন থেকে ঘুরে দাদার দেশে চলে আসে ভাবতে পারি না। বগুড়ায় জন্মেছি, বড় হয়েছি। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বিএনপির রাজনীতি ও নীতি -আদর্শ নিয়ে বয়ান শুনে শুনে অভ্যস্ত। সারাজীবন শুনলাম- চীন হচ্ছে বিএনপির পেয়ারে দোস্ত। আপনারা জানেন- বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি ছিল (সচেতনভাবেই ছিল বলছি-কারন এখন আর সেই ঘাঁটি নেই)। সবাই জানে মেজর জিয়ার জন্মস্থান বলেই বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হয়েছে। কথা সত্য। কিন্তু এতটুকু বললেই বগুড়ার রাজনীতির দর্শন ও গনমানুষের চরিত্র সম্পর্কে ধারনা পরিস্কার হবে না। বাস্তবে বগুড়ার মানুষ প্রচন্ড ভারত বিরোধী। ছোটবেলায় মুরুব্বীদের মুখে গল্প শুনেছিলাম- একদিন বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সেনা কর্মকর্তাদের দুইজন 'র' এর এজেন্ট হিসেবে ধরা পড়েছিল। সম্ভবত ৮০ সালের দিকের ঘটনা। ঐ দুই বিশ্বাসঘাতককে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের উপর গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। টানা তিনদিন রাস্তায় লাশ ঝুলিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। মূলতঃ এই ছোট্ট ঘটনাকে আপনারা বগুড়াবাসীর ভারত ঘৃণার ট্রেইলার ভাবতে পারেন। মেজর জিয়া ও বিএনপির ভারতবিরোধী নীতিই বগুড়া এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গে তাদের এত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এখন এতটা জনপ্রিয় আর নেই। কেন নেই- আশা করি তার ব্যাখ্যা আর দিতে হবে না। এখন আপনারা যারা গ্লোবাল পৃথিবীর এত্ত বড় বুকওয়ালা নাগরিক, তারা বগুড়া বাসীর এই ভারতবিরোধীতার সংকীর্ণ জাতীয়তাবোধ নিয়ে আমাকে খোঁচা মারতেই পারেন। তবে জেনে রাখুন- বগুড়াসহ সমগ্র উত্তরবঙ্গের মানুষ বিশ্বাস করে- ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ যদি কোন নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ঝুঁকিতে থাকে, তবে সেই ঝুঁকি একমাত্র ও কেবলমাত্র ভারতের দিক থেকেই আসবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বাকশালী আওয়ামী সরকার আর তাদের প্রভু রাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় বিএনপিকে চুবানীর পর চুবানী দেয়া হলো। ঢাকা সেনানীবাস থেকে এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া করলো। বালুর ট্রাক দিয়ে গুলশানে আটকিয়ে রাখলো। ৫ ই জানুয়ারীর অবৈধ নির্বাচনে কাপড় খুলে ভারত বাকশালীদের গা ধুয়ে দিল। তখন বিএনপি ভাবলো- দাদাদের সাথে পীড়িত না করলে ক্ষমতায় আসা যাবে না। পররাষ্ট্রনীতিকে ১৮০ ডিগ্রী উল্টিয়ে ভারতের দিকে তাক করলো। 'আমরা ভারতের শত্রু নই' বলে মুখে খই ফুটিয়ে প্রমাণ করতে চাইলো বিএনপি ভারতের বন্ধু। কেউ কেউ ভাবলো- মোদি ক্ষমতায় আসলে দুনিয়া উল্টে দিবে। হুম---- মোদি জ্বী আসলো। এক হালি ঘোড়ার আন্ডা প্রসব করলো। ওরে খালা, ভারতের সাথে একদলের যেখানে লিভ টুগেদার চলছে, সেখানে পরকীয়া করে অধিকার আদায়ের চেষ্টা কেমন ছেলেখেলা হয়ে যায়, বুঝতে পারো না। ভারত কোন দুঃখে আওয়ামী সঙ্গী ফেলে বিএনপিকে বুকে টেনে নিবে? কিসের ঠেকা ওদের?

ছাগলামী করতে করতে চীনের ঘরটাও বিএনপি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো। চীন দেখছে- আমার বন্ধু আস্থাহীনতায় ভোগে, আমার শত্রুর (ইন্ডিয়ার) কাছে যাওয়ার ব্যাকুলতা দেখায়, তখন আমারও তো কিছু করার আছে। এই নে- আওয়ামী বাকশালীরাও আমার বন্ধু। তাতে ইন্ডিয়ার গালে একটা থাপ্পড় হলো, আর রামছাগল বিএনপিকেও মূলা খাওয়ানো হলো। বাকশালীরা চীনাদের বুঝালো- আমরা বাংলাদেশে চাইনিজ ব্রান্ড ডেমোক্রেসি চালু করছি। মানে সরকাররে গৃহপালিত বিরোধী দল। চীনে যেমন ক্ষমতাসীন চাইনীজ কমিউনিষ্ট পার্টি আর তার সাথে গৃহপালিত বিরোধী দল, বাংলাদেশেও তেমন বাকশালী আওয়ামী পার্টি ও তার সাথে হুমু এরশাদ- রওশন ম্যাডামের মজার দল। খাপে খাপ। চীন দেখলো- আওয়ামী লীগ তো আমার খালাতো ভাই। ধর, বুকে টেনে ধর।

বুকে হাত রেখে বিএনপি বলতে পারবে না- তাদের পররাষ্ট্রনীতি আসলে এখন কোথায় আছে? পৃথিবীর ইনফ্লুয়েন্সিভ রাষ্ট্রগুলোও বিএনপির দুর্বোধ্য পররাষ্ট্রনীতি স্টাডি করতে পারে না। কোন দেশ, কিসের ভিত্তিতে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে ভাই? আপনি নির্যাতিত, বাড়ি ছাড়া, সন্তানহারা, নির্বাসিত, মজলুম- ঠিক এই কারনেই আপনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে? এই সংজ্ঞায় বর্তমান শাসকগোষ্ঠিও বাবা হারা, গ্রেনেড খাওয়া, জেলে যাওয়া, ত্যাগ স্বীকার করা দল। আসলে আন্তর্জাতিক ইনিশিয়েটরদের কাছে বিএনপির মেসেজ কি? একদিকে বাকশালী শাসকরা তাদের চিরন্তন বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রতিপক্ষের বিএনপির দীর্ঘদিনের বন্ধু চীনকেও প্রেমের ভাগ দিতে চাইছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে খামোশ বলে, তখন আপনি যতই অবাক হোন না কেন- পেছনে রাশিয়ার বড় হাতের ছায়াটাও দেখতে হবে।

ধুর, এৎ কথা বলে কি লাভ?
কে শুনবে, আমার প্রলাপ?

এসএসসিতে উচ্চতর গনিত পড়েছিলাম। ভাবতাম এসব গনিতের জটিল সমীকরণ বাস্তব জীবনে কি কাজে লাগবে? গনিতে ভালই ছিলাম। বরাবর জটিল সবকিছু নিমিষেই সমাধান করতাম। কিন্তু মাগার, বিএনপির উচ্চতর পররাষ্ট্রনীতি ! এই জটিল সমীকরণ সমাধানের ক্ষমতা আমার মত সাধারন নাগরিকের নেই। আর বিএনপির সাধারণ মানুষের দরকারও নেই। উচ্চমাঙ্গের এলিট কোটেড-বুটেড লোকের পার্টি হলেই চলবে। গুলশানে কি আর সবার জায়গা হয় রে ভাই?

আচ্ছা- আমার পিএইচডি'র এই টপিক আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো ?

0 comments:

Post a Comment