Tuesday, November 22, 2016

জীবন থেকে দেখা বাংলাদেশী ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসি (পর্বঃ ০২)

রাজনীতি নিয়ে কথা বলি, বলতে চাই। অধিকাংশ তরুণের "I hate Politics'' দর্শনের মাঝে কেন জানি আমিপলিটিক্সকেই খুব বেশী ভালবেসে ফেলেছি। রাজনীতি নিয়ে পড়তে, ভাবতে, জানতে ভাল লাগে। ইদানিংআমার একটা দারুণ রকমের সুবিধা হয়েছে। নিজের ছোট্ট জীবনে পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকেই রাজনীতির চেহারাকে বেশ ভালভাবে দেখতে পারি।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইন্টারফেস কি? চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুন প্লিজ। রাজনীতি শব্দ উচ্চারনের বলতেই 'ভোট' আর 'ক্ষমতা'। 
তরুণ বয়সেই কিভাবে যেন 'ভোট' আর 'ক্ষমতার' সাথে মল্লযুদ্ধ করার সুযোগ হয়েছিল। সেখান থেকেই আমি বাংলাদেশী রাজনীতির একটা নতুন ব্র্যান্ডের সন্ধান পেয়েছি। নাম দিয়েছি-বাংলাদেশী ব্র্যান্ড 'ডেমোক্রেসি'। 
বিশ্বাস করুন- ভোটের রাজনীতিতে অংশ না নিলে আপনি কখনোই আমার এই নিউ ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসির চেহারা দেখতে পাবেন না।

অনেকেই জানেন- বিগত ইউপি নির্বাচনে আমি বগুড়ার একটি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলাম। আমার চেয়ে ৪০ বছরের সিনিয়র, আমার শিক্ষকের কাছে ১৬ ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। এই ফলাফল নীরবে মেনে নেওয়া এবং নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান স্যারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ভয়ংকর এক কালিমা লেপন করে দেয়া হয়েছে- ''তা হিলারী প্রেসিডেন্সি পরাজয় এবং একজন বাংলাদেশী তরুনের পরাজয়'' শিরোনামে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছিলাম। আজ ঠিক সে রকমই আরেকটু রাজনৈতিক জটিলতার উপাখ্যান তুলে ধরছি। আগেই বলে রাখি- আমি খুব দুর্বল ও ছোট মানুষ। নিজের ছোট্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই রাজনীতি নিয়ে কথা বলছি। আমি জানি- কিছু ভাই- আমার এই আত্মকেন্দ্রীক বর্ণনায় উষ্মা প্রকাশ করবেন। আপনাদের বিরক্তির কারণ হওয়ায় ক্ষমা চেয়ে সচেতনভাবেই দায় নিচ্ছি। নিজের জীবন থেকে বলার সুবিধা হলো- কনফিডেন্সের সাথে একদিকে অবস্থান নেয়া যায়।

আমি যেমন নিউ ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসিতে বড় সংকট হিসেবে দেখছি- সাধারন নাগরিক ও ভোটারদের চিন্তা ও আকাঙ্খার দৈণ্যতাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় সংকট। এই লিখার উপসংহারে লাইনটি এমন হতে পারে- "সূতরাং বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যর্থতার বড় দায়টি নাগরিকদের কাঁধে।'' এই লাইনটি পড়ে আমাকে যারা ইতোমধ্যে বকাঝকা শুরু করেছেন, তাদের ধন্যবাদ এখন একবার জানিয়ে- এই লিখার শেষেও একবার ধন্যবাদ দিতে চাই। ততক্ষণ মনে মনে বকা দিয়ে লিখাটি পড়তে থাকুন প্লিজ।

উত্তরবঙ্গে শীত বেশ ভালভাবেই জেঁকে বসেছে। শীতের মৌসুম মানেই গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের মৌসুম। অধুনা তার নাম হয়েছে তাফসীর মাহফিল। এসএসসি পর্যন্ত গ্রামে ছিলাম। দুর-দুরান্তে বাবা, চাচা এবং গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে ওয়াজ শুনতে যেতাম। সত্যি বলতে কি- ওয়াজ মাহফিলে ওয়াজিনের ওয়াজ আমার মোটেই ভাল লাগতো না। আমি সেই ছোট্ট বয়সেই বুঝতাম- এই হুজুরেরা কোকিল কণ্ঠী, মিষ্টভাষী, আন্তর্জাতিক মুফাসসিরে কোরআন, ইসলামী বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হলেও বাস্তবে এরা টাকার চুক্তি করে ওয়াজ করতে এসেছেন। এই একটি কারনেই তাদের ওয়াজ আমার মোটেও সহ্য হতো না। আর ওয়াজে কিসের তাফসীর? সুরের নহর বইয়ে দিয়ে কেচ্ছা-কাহিনীতে ভরপুর কিছু জাহেলী কথাও বলতে শুনেছি। ইসলামের প্রানসত্বা নিয়ে মোটেও কোন কথা থাকতো না। ওয়াজ শেষে যে ভাষায় চাঁদা কালেকশন করতো, তাতে ১০/২০ টাকার বিনিময়ে জান্নাতে রাইয়ান পাওয়া যেতো। আর হাজার টাকা হলেও কনফার্ম জান্নাতের টিকেট। হুজুর বলছেন- 
যে দিবে টাকা দশ/
জান্নাতে যাবে ফসাফস/ (আঞ্চলিক ভাষায় ফসাফস মানে কোন বাঁধা ছাড়াই)
হুজুরদের ওয়াজ শোনার ন্যুনতম কোন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও মাহফিলে যেতাম। মাহফিলে যেতাম- প্রধান অতিথী ও বিশেষ অতিথীর বক্তব্য শোনার জন্য। আপনাদের কাছে হাস্যকর হলেও এটাই আমার জীবনে সত্য। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম রাজনীতিবিদ হবো। তাই রাজনীতিবিদরা ওয়াজ মাহফিলে এসে কিভাবে নিজেদের এপ্রোচ করে, কথা বলে, পাবলিক রিলেশন করে- খুঁটেখুঁটে দেখতাম। নিজেকে অতিথীদের আসনে কল্পনা করে রিহার্সেলও করতাম। ভুলে যাবেন না- আমি তখন ক্লাস সেভেন/এইটের ছাত্র। নেতৃত্বের লোভ, ক্ষমতা ও রাজনীতির বেনিফিট সে অর্থে বুঝার বয়স তখনো হয় নি। স্রেফ রাজনীতি ভাল লাগতো- এই জায়গা থেকেই নিজেকে দেখতাম। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের সামাজিক ইনফ্লুয়েন্স আমার কিশোর মনে ইনফ্লুয়েন্সিভ হওয়ার বীজ বুনেছিলা।

গত ১৫ দিনে আমার কাছে কমপক্ষে ১০ টি ফোন এসেছে। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের তাফসীর মাহফিলে অতিথী হওয়ার দাওয়াতের ফোন। সেই কিশোর বয়সের হাস্যকর স্বপ্ন যুবক বয়সেই বাস্তবে সামনে চলে আসবে- ভেবে শুধু হাসছি আর আগের দিনের ছেলেমানুষির কথা চিন্তা করছি। আমি বিনয়ের সাথে সকল দাওয়াতকে গ্রহন করেছি। কিছুটা রোমাঞ্চ তো আছেই। নামিদামী মানুষের সাথে আমিও গনমানুষের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসবো- ব্যক্তিপূজার জায়গা থেকে অনেক আকর্ষনীয় ব্যাপার। দূর্বল মানুষ হিসেবে আমারও ভাল লাগার বিশাল একটা উপলক্ষ এখানে আছে। আমি অতিথি হিসেবে ৫/১০ মিনিট বক্তব্য দেয়ার একটা খসড়া নোটও তৈরি করে ফেলেছি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করেছি কিনা- সেটি অনলাইনে না বলি; আয়না, আমি আর আমার বউ জেনে থাক। এভাবে ওয়াজ মাহফিলের প্রস্তুতির মাঝেই জীবনকে বেশ সরেস উপভোগ্য মনে হতে লাগলো। ঢাকা থেকে এখন আমি এলাকায় যাচ্ছি- দাওয়াতী মেহমান হিসেবে। এলাকায় মাইকিং হচ্ছে আমার নামে। আমার জায়গায় আপনাকে কল্পনা করুন- বেশ তৃপ্তি পাবেন ( যদি আমার মত দূর্বল ঈমানদার হোন, তাহলেই কেবলমাত্র)।

আমার পৃথিবী আরেকবার উল্টে গেল। বাংলাদেশী ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসির আরেকটি পৃষ্ঠা পড়তে হলো। আমার রোমাঞ্চ নিমেষেই উবে গেল। আমি এক নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর সামাজিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হলাম। লড়াই বলবো না। কেন এই বিশ্রী লড়াইয়ে আমি জিততে চাওয়া তো দূরের কথা অংশগ্রহনই করতে চাই না।
এলাকায় মাইকিং হচ্ছে- উক্ত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ............... বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি..................... বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত থাকবেন থানা বিএনপির সভাপতি......... বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত থাকবেন সাবেক ছাত্রনেতা নূর মোহাম্মাদ আবু তাহের। আরো উপস্থিত থাকবেন............

এবার পাবলিক রিএকশন দেখুন। আচ্ছা- আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানের সাথে একই অনুষ্ঠানে নূর মোহাম্মাদ কেন? আওয়ামী লীগের থানা সভাপতির সাথে একই অনুষ্ঠানে নূর মোহাম্মাদ কেন? তবে কি আওয়ামী-জামায়াত আঁতাত? তবে কি নূর মোহাম্মাদ বিক্রি হয়ে গেল? তবে কি নূর মোহাম্মাদ আদর্শ্চ্যুত হয়ে গেল? তবে কি নূর মোহাম্মাদ ......... হ্যান-ত্যান।

নির্বাচনের কর্মীবৃন্দ ফোনের পর ফোন দিতে থাকলো। এভাবে মাহফিলে আসা যাবে না। এভাবে আওয়ামী লীগের সাথে একই মঞ্চে ওঠা যাবে না। এভাবে এটা করা যাবে না। এলাকায় লোকজন ভুল ভাবছে। ............

আমি তখন হাসছি আর হাসছি। বাংলাদেশের নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখেই হাসছি। রাজনীতির পাঠ পেয়ে হাসছি। এক অসহিষ্ণু রাজনীতির দীক্ষা পাচ্ছি। আমাকে যারা ভালবাসেন তারাও প্রশ্ন তুলছেন। যারা ঘৃণা করেন তারাও প্রশ্ন তুলছেন। যারা বিরোধীতা করেন তারা তো মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গেছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার-সাধারণ নাগরিকরা পর্যন্ত ভাবছেন, আমার কোনভাবেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানের সাথে একই মঞ্চে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও বসা উচিৎ হবে না। আমরা অনেকেই বলি- জামায়াত গনমানুষের আকাঙ্খাকে ধারণ করতে পারে না, লালন করতে পারে না। আমার এলাকার গনমানুষের আকাঙ্খা হচ্ছে- বিপরীত আদর্শের রাজনীতিবিদদের সাথে কোন বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যাবে না। একই মঞ্চে ওঠা যাবে না। আর জামায়াত আমাকে বিপরীত আদর্শের মানুষদের সম্মান করতে শিখিয়েছে, ভিনমতের মানুষের কাছে যেতে বলেছে। ভিন্নমতের মানুষদের সাথে একই মঞ্চে বসলে আমাকে শোকজ করা হয় না। এখন আমি বুঝতে পারছি না- গনমানুষের আকাঙ্খাকে লালন করে ভিন্নমতের আদর্শের সকল মানুষদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো, নাকি গনমানুষের বিপরীতে গিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবো? আমি কি ভিন্নমতের মানুষদের সামাজিকভাবে বয়কট করবো, না কি তাদের কাছাকাছি যাব?

আমি এই স্ট্যাটাস পাবলিকলি দিচ্ছি। আমার এলাকার অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই স্ট্যাটাসে বর্ণিত সংকটের সত্যতা নিরুপণ করবেন। আমি সত্যিই এক মানসিক সংকটে ভুগছি। রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো ভয় পাইনি। শ্বাপদ-সংকুল পথ পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেল-জুলুম-নির্যাতন, গ্রেফতার- শাহাদাতকে কবুল করেই এ পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু বাস্তব ময়দানে গনমানুষের সাথে রাজনৈতিক ময়দানে গিয়ে আমি গনমানুষের আকাঙ্খার যে দিকটি দেখছি- তাতে সত্যিই ভীষন ভয় পেয়ে গেছি। ভড়কে গেছি। হয়তো এই আকাঙ্খার সাথে অভ্যস্থ নই। সাধারণ মানুষ যেটাকে অন্যায়, আপোষকামীতা, আঁতাত বিবেচনা করছেন, সেটিকে আমি 'আদর্শিক অবস্থান' বিবেচনা করছি। কমন পিপলের সাথে এই সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়ে কতটুকু পথ চলতে পারবো জানি না।

একটি বিষয় পরিস্কার- বাংলাদেশী ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসিতে আপনি যতক্ষণ ভিন্ন আদর্শের সাথে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে লিপ্ত আছেন, মঞ্চে উঠে গালাগালি করতে পারবেন, পিষিয়ে মারতে চাইবেন, তাদের ধুইয়ে দিতে পারবেন, ততক্ষন আপনি স্ব-আদর্শের উপরে আছেন বলে বিবেচিত হবেন। আপনি আঁতাত করেন নি বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু যখনই আপনি উদার বুকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিবেন, পরাজিত হয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে সহযোগীতা করবেন, তার সাথে সামাজিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখবেন, একই মঞ্চে উঠবেন, শ্রদ্ধার চোখে দেখবেন- তখনই আপনি আদর্শ্চ্যুত, আঁতাতকারী, আমানতের খেয়ানতকারী বলে বিবেচিত হবেন।

ওয়াল্লাহি- বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির দর্শন ও আদর্শকে প্রচন্ড ঘৃণা করি। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ইসলামী আন্দোলনকে ফেরাউনি স্টাইলে দমিয়ে দেওয়ার কারিগর আওয়ামী জাহেলী দলকে আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। যতদিন বাঁচবো, সেক্যুলার আওয়ামী রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেই বাঁচবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমি দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলি- এলাকার আওয়ামী-বিএনপি সহ আমার বিপরীত আদর্শের প্রত্যেকের কাছে আমি গিয়েছি, যাই এবং ভবিষ্যতেও যাব। কিন্তু বাংলাদেশী ব্র্যান্ড ডেমোক্রেসিতে সাধারণ মানুষের যে চরিত্র ও আকাঙ্খা দেখেছি- সেখানে অনেক দূরের পথ পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া উপায় নেই। দিল্লী দূর অস্ত।

আমি স্ট্যাটাসের মাঝে লিখেছিলাম ---এই লিখার উপসংহারে লাইনটি এমন হতে পারে- "সূতরাং বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যর্থতার বড় দায়টি ভোটারদের কাঁধে।'' উপসংহারে সেটি না লিখে লিখছি- "সূতরাং বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যর্থতার বড় দায়টি নাগরিকদের কাঁধ থেকে সরিয়ে নিতে আদর্শিক রাজনীতিবিদদের অনেক দূরের পথ পাড়ি দেয়ার হিম্মত থাকতে হবে"।

0 comments:

Post a Comment