Wednesday, November 2, 2016

এলকোহল নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনের কথা

দুটি ব্যাপার আমার কাছে ডিসগাস্টিং। প্রথমটি হলো- ইসলামের বিধানাবলীকে বিজ্ঞানের দাঁড়িপাল্লায় মেপে তার যৌক্তিকতা পরিমাপ করার বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আর দ্বিতীয়টি হলো- ইসলামের বিধানাবলীর প্রানসত্বাকে উপস্থাপন না করে সেই বস্তুবাদী দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে প্র্যাক্টিক্যালিটি প্রমাণের লক্ষ্যে ওলামায়ে কিরামের হিপোক্রেসি।

এই যেমন আলেম-ওলামাদের নিকটে 'ইসলামে এলকোহলের নিষেধাজ্ঞার (হারাম) বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা কি' প্রশ্ন করলে কমন উত্তর পাবেন- মেডিকেল সাইন্সেই প্রমাণিত হয়েছে এলকোহল স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। ইসলাম মানবিক ধর্ম, বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম- তাই এই ক্ষতিকর ব্রেণ ধ্বংসকারী এলকোহল ইসলামে নিষিদ্ধ। প্রশ্নটিই আমার কাছে অবান্তর। এলকোহলের নিষেধাজ্ঞার "বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা" একজন মূমীনের প্রশ্ন হতে পারে না এবং ইসলাম বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার কাছে যিম্মী নয়। আর এই প্রশ্নের উত্তরে "বিজ্ঞানসম্মত উত্তর" দিতে গিয়ে ইসলামের প্রানসত্ত্বাকে উপেক্ষা করার হিপোক্রেসিও অবাঞ্চিত ব্যাপার।

এখন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে- স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর শুধু এ কারনেই এলকোহল নিষিদ্ধ হয়েছে? এলকোহল নিষিদ্ধের কারণ স্বাস্থ্যক্ষতি অথবা মানসিক ভারসাম্যহীনতা- এ ব্যাপারে রেফারেন্স পেলে আমি স্বস্তি পেতাম।

এলকোহলের ব্যাপারে ইসলামের প্রানসত্বার ঘোষণা কি? আমি যদি এভাবে বলি- এলকোহলের সাথে ''তাওহীদ তথা একত্ববাদ" এর সেন্সিটিভ প্রশ্ন জড়িয়ে আছে বলেই আলকোহল নিষিদ্ধ- তাহলে কি আপনি আমাকে মেহেরবানী করে ভুল প্রমাণিত করে ভ্রান্তি দূর করবেন প্লিজ?

এলকোহলের সাথে তাওহীদ কিভাবে লিংকড? জানবো একটু পরেই ইনশাআল্লাহ্‌। তার আগে আপনার মানসে বাসা বাঁধা চিন্তার দিকে খেয়াল করুন। এলকোহলিক ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ হয়, উন্মাদ হয়, বুদ্ধি-বিবেক হারিয়ে ফেলে। রাইট? আপনি ভাবছেন এসব থেকে মুক্তির জন্যেই এলকোহল প্রোহিবিটেড। ওয়েল। আপনি জানেন নির্দিষ্ট মাত্রার এলকোহল এসব উন্মাদনা, নেশার সৃষ্টি করে না। তাহলে কি আল্লাহ্‌র রাসূল বলতেন না- তোমরা এক ঢোকের বেশী এলকোহল খেও না। এমন মাত্রায় খেও যেন নেশাগ্রস্থ হয়ো না। (নাউজুবিল্লাহ)। না, আমাদের দ্বীন আল ইসলামে এক বোতল এলকোহল নেয়া আর এক গ্লাস নেয়া একই কথা।

এবার আমরা তাওহীদের সাথে এলকোহলের লিংক খুঁজার আগে একটি সহীহ হাদীস জেনে নিই। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ مَنْ لَقِيَ اللَّهَ مُدْمِنَ خَمْرٍ لَقِيَهُ كَعَابِدِ وَثَن অর্থাৎ “ যে ব্যক্তি এলকোহলিক অবস্থায় মারা যাবে, (কিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে”।
কেন? এলকোহলিক মূর্তিপূজকের ন্যায় কেন? লিংক এখানেই। মূর্তিপূজকরা যেমন এক আল্লাহ্‌র তাওহীদে অটুট না থেকে একাধিক ইলাহতে পূজা করেছে; ঠিক তেমন এলকোহলিকরা এক আল্লাহ্‌র সীমারেখার বাহিরে এলকোহলের দাসত্ব করেছে। এটাই লিংক। এলকোহলিকের সাথে মূর্তিপুজকের এটাই মিল।

আল্লাহ্‌ তার বান্দাকে কেবলমাত্র তার দাসত্ব করাতে চান। আল্লাহ্‌র বাহিরে কারো দাসত্ব করা হারাম। এলকোহল এমন এক প্রভূ হয়ে যায়, যেখানে এলকোহলিকরা তার আনুগত্য না করে পারে না। প্রতিদিন এলকোহল না খেলে চলে না। এলকোহল খেয়ে প্রবৃত্তির দাস না হয়ে থাকা যায় না। এন্ড দ্যাটস দ্যা রিজন বিহাইন্ড প্রোহিবিটেশন অব এলকোহল।

তাওহীদের বিপরীতে এলকোহলিক শিরক করে এবং এটিই এলকোহল হারাম হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। ইসলামের এই প্রানস্ত্বার কথা না বলে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যগত বেনিফিট দিয়ে এলকোহলিক ফ্রি জেনারেশন বিল্ডাপ করা সূদুর পরাহত ব্যাপার এবং এটাকে আমি আলেমদের জ্ঞাণের দৈণ্যতা ও হিপোক্রেসি বলে বিবেচনা করি (ব্যতিক্রমী আলেমে দ্বীন অবশ্যই আছেন এবং আমি তাদের হৃদয়ের গহীন থেকে ভালবাসি।)।

আল্লাহ্‌ আমাদের দ্বীনের সত্যিকারের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তার দাসত্ব করার তৌফিক দিন। বারাকাল্লাহ।

0 comments:

Post a Comment