Wednesday, November 2, 2016

অনলাইনে সব ইস্যুতে কথা বলার রোগ

লেখালেখি এক ভিন্ন রকমের নেশা। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়াতে এ সমস্যা খুব ভালভাবেই প্রতিভাত হচ্ছে। ''চলমান ট্রেন্ডিং ইস্যুতে আমার একটা বয়ান না থাকলে জাতি বেশ বঞ্চিত হয়ে গেল ''- টাইপের ভাবনা থেকেই আমরা সবকিছুতে ভয়েস দেয়ার চেষ্টা করি। আমি পড়েছি সাইন্সের কোন স্পেশালাইজড সাবজেক্টে। তাতে কি ? চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালীন সময়ে আমি "ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের" স্পেশালিষ্ট। পড়েছি বিজনেস স্টাডিজ। ফিনান্সিয়াল ইস্যু নিয়ে লিখলে লাইক-কমেন্টস কতই বা আসবে। খাদিজা হত্যাচেষ্টার লোহমোর্ষক ইস্যুর পোষ্টমর্টেম করতে আমি তখন 'সোস্যাল সিকিউরিটি' স্পেশালিষ্ট। এভাবেই আমি কখনো পলিটিক্যাল এনালাইস্ট, কখনো কালচারাল গ্রোওথ এন্ড ডাইভার্সিটির প্রফেসর, কখনো জিওগ্রাফির ফেলো, কখনো হিষ্ট্রির পিএইচডি হোল্ডার, কখনো ধর্মীয় সলিউশনে মুফতী। সোস্যাল মিডিয়াতে একই ব্যক্তির অনেক প্রতিভা। এ এক বিষ্ময়কর মেধার খনি।
আমি নিজেকে দিয়েই বিচার করি- এমন কেন হয়? উত্তরে যা পেয়েছি-

এক,
আমার মত ভ্যালুলেস মানুষের সোসাইটিতে মূলতঃ কোন স্পেস নেই। নিজের ভেতরের অব্যক্ত কথামালা প্রকাশ করার কোন মঞ্চ নেই। আমার কথা শোনার কোন লোক নেই। আমি এত্ত বড় রাজনৈতিক নেতা নই যে, হাজা্রো লোকের সম্মুখে আমার পলিটিক্যাল ফিলোসফি ও আইডোলজীর বয়ান শুনতে কেউ এসে মাইক এগিয়ে দিবে। অমুক ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম বলে ওয়েলকাম করার কেউ নেই। আমি বড় কোন সেলিব্রেটি নই, যার কভারেজ নেয়ার জন্যে মিডিয়া কর্মীরা সিরিয়াল দিয়ে রাখবে। এমন কোন লেখক নই, যার হার্ডকপি পড়তে 'অন্যপ্রকাশ' প্রকাশনীর সামনে লাইনে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু খুব সিম্পল এই 'আমি' মানুষটাকে হঠাৎ মঞ্চ এনে দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া। হ্যাঁ, আমি এখন চাইলেই ১০০০ লোকের কাছে আমাদের চিন্তাধারাকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারি। আমি চাইলেই বয়ান দিতে পারি।

দুই,
মানবিক সত্বার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হচ্ছে- আমি যা কিছু জানি, তা অপরের সামনে রিপ্রেজেন্ট করতে না পারলে, সেই জানার পূর্ণতা পায় না। আমি কিছু জানি- এটা তো অন্তর্নিহিত ব্যাপার। কমিউনিটিতে তার ভিজিবল প্রকাশ না হলে, 'আমি যে অনেককিছুই জানি' তা তো কেউ জানলো না। সোস্যাল আইডেন্টিটির ক্রাইসিসে এতদিন আমার 'সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা' প্রস্ফুটিত হওয়ার সুযোগ (স্পেস) পায় নি। সোস্যাল মিডিয়া এখানে এক র‍্যাডিকাল চেইঞ্জ এনে দিলো। আমার মত মানুষকে এক্সপোজ করার বিশাল এক প্ল্যাটফর্ম। ব্যাস। কারো ভাল না লাগুক, কেউ বীতশ্রদ্ধ হোক, কেউ মূল্যায়ন না করুক- আমি জাতির জন্য অমূল্য জ্ঞানভান্ডার সোস্যাল মিডিয়াতে অকাতরে বিলিয়ে যেতেই থাকবো।

তিন, 
একজন গ্রাম্য বিচারকও সালিশে বসে আইন ইস্যুতে কথা বলার স্পেস পান। একজন ধর্মীয় নেতা আন্তঃধর্ম, বিভিন্ন মতবাদ, আস্তিকতা-নাস্তিকতা ডিবেট নিয়ে কথা বলার গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেন। কর্তা তার পরিবারে এডমিনিষ্ট্রেটিভ পাওয়ার এক্সারসাইজ করার আল্টিমেট সুযোগ পান। পাতিনেতা-উপনেতা চায়ের টেবিলে রাজনীতির দর্শন ফেরি করে বেড়ান। এক কথায় ডিফরেন্ট মানুষের কথা বলার ডিফরেন্ট জায়গা আছে। কিন্তু আমি ? ব্রডব্যান্ড অথবা মডেমের কল্যানে কিবোর্ডে ল', সাইকোলজি, ফরেন পলিসি, পলিটিক্স, রিলিজিওন, হিষ্ট্রি সহ সব ইস্যুতেই নিজের ক্ষমতা, মেধা, যোগ্যতা সব প্রকাশ করার এক কৃত্রিম প্রচেষ্টা চালিয়ে প্রবোধ দিই- আই আম সামওয়ান স্পেশাল অব দিজ সোসাইটি।

চার, 
'ফিডব্যাক'। এক দারুণ ফিলিংস! একটা লিখা পাবলিশড হওয়ার সাথে সাথেই লাইকস, কমেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে লিখার তৃষ্ণা সমানুপাতিকহারে বৃদ্ধি পায়। এই তৃষ্ণা আমাকে প্রতিদিন স্বরণ করে দেয়- আজ কিন্তু জাতির উদ্দেশ্যে মূল্য বান জ্ঞান বিতরন করা হয় নি।

টু মাই অল ফ্রেন্ডস, 
এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আপনাদের লিখার হাতকে ভেঙ্গে গুড়ে দেয়ার কোন ইচ্ছে মোটেও নেই। শুধু বলি- আগডুম, বাগডুম, ঘোড়াডুম না লিখে- সোস্যাল মিডিয়াতে সৃষ্টিশীল কিছু করি। আমার আজকের লিখা আগামী ৫০০ বছর পরেও হয়তো বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে ব্যবচ্ছেদ করতে রেফারেন্স হবে। সোস্যাল মিডিয়াকে নিজের মনের খায়েশ মেটানোর স্পেশ মনে না করে, বিশাল এই উন্মুক্ত মঞ্চে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। সব ইস্যুতেই ভয়েজ দিই, সমস্যা নেই। তবে ভয়েজ দেয়ার আগে এটলিষ্ট সেই বিষয়ে মিনিমাম কিছু স্টাডি করি। বহুত ফায়দা হবে ! আমার লিখা যেন ব্যক্তিত্ব খোয়ানোর মাধ্যম না হয়ে যায়। আমার দৈণতা যেন না প্রকাশিত হয়ে যায়। আসুন অনলাইনে আমরা ক্রিয়েটিভ কিছু করি। আমাদের মত নস্যি মানুষগুলো জাতি/উম্মাহ গঠনে হয়তো রেভ্যুলনশনারী কনট্রিবিউটস করতে পারবো না, কিন্তু অনলাইন দুনিয়াতে কিছু ইউনিক কাজ করে কন্ট্রিবিউশনের পথ তো খোলা।

(যারা ভাবছেন- এই স্ট্যাটাসও তো উপরে বর্ণিত চারটি কেসস্টাডির সাথে মিলে যায়, তাদের উদ্দেশ্যে বলি- ইয়েস আমি হিউমান বিং, ফেরেস্তা নই। তবে আমি কনশাসলি আমার মিশন ও ভিশনকে সামনে রাখার অব্যাহত চেষ্টা করি। )

বি হ্যাপি এভরিওয়ান ফর এভার।

0 comments:

Post a Comment